Tax included and shipping calculated at checkout
দিনের পুরোটা সময় আমাদের ত্বক নানা রকম চাপের মধ্যে থাকে। সূর্যের রশ্মি, ধুলোবালি, ঘাম, দূষণ এবং মেকআপের অবশিষ্টাংশ মিলিয়ে ত্বক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এই ক্লান্ত ত্বকের পুনরুদ্ধারের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো রাত। কারণ ঘুমের সময় ত্বক নিজের কোষ পুনর্গঠন প্রক্রিয়া চালায় এবং নতুন কোষ জন্ম নেয়। তাই রাতে ত্বকের যত্ন নেওয়া শুধু বিলাসিতা নয়, এটি ত্বকের প্রাকৃতিক স্বাস্থ্য বজায় রাখার অপরিহার্য অংশ।
ঘুমানোর আগে প্রথমেই ত্বককে ভালোভাবে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। সারাদিনের ধুলো, তেল, মেকআপ বা দূষণের কণাগুলো যদি মুখে থেকে যায়, তাহলে ত্বকের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যেতে পারে, ফলে দেখা দেয় ব্রণ, র্যাশ বা ত্বকের নিস্তেজ ভাব। তাই প্রতিদিন রাতে মুখ ধোয়ার সময় নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী ফেসওয়াশ বেছে নেওয়া জরুরি। শুষ্ক ত্বকের জন্য হাইড্রেটিং ফেসওয়াশ এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা ফোম ক্লিনজার সবচেয়ে উপযুক্ত। ত্বক পরিষ্কার রাখার মাধ্যমেই শুরু হয় একটি কার্যকর নাইট স্কিনকেয়ার রুটিন।
ত্বক পরিষ্কার করার পর টোনার ব্যবহার করলে ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক থাকে এবং লোমকূপ সংকুচিত হয়। এর ফলে ত্বক আরও সতেজ হয় এবং পরবর্তী ধাপের যত্ন সহজে গ্রহণ করতে পারে। প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে গোলাপজল বা গ্রিন টি টোনার ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং সারারাতের ক্লান্তি দূর করে।
এরপর ত্বকে প্রয়োজন হয় গভীর যত্নের, যা দিতে পারে সিরাম। সিরাম ত্বকের গভীর স্তরে পৌঁছে কোষগুলোকে পুষ্টি জোগায়। ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের কালচে ভাব ও দাগ হালকা করে, অন্যদিকে হায়ালুরোনিক অ্যাসিড সিরাম ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে। যারা প্রতিদিন রাতে নিয়মিত সিরাম ব্যবহার করেন, তাদের ত্বক সাধারণত অনেক বেশি মসৃণ ও প্রাণবন্ত থাকে।
সিরামের পর ত্বককে সুরক্ষা দিতে হয় একটি উপযুক্ত নাইট ক্রিম দিয়ে। ভালো মানের নাইট ক্রিম ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সাহায্য করে, বয়সের ছাপ কমায় এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে। শুষ্ক ত্বকের জন্য ঘন ময়েশ্চারাইজিং নাইট ক্রিম আর তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হালকা জেল-ভিত্তিক নাইট ক্রিম ব্যবহার করা উত্তম। রাতে এই ক্রিম ত্বকে লাগিয়ে ঘুমালে সকালে মুখে এক প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা অনুভূত হয়।
চোখের চারপাশের ত্বক শরীরের অন্য অংশের তুলনায় অনেক বেশি সংবেদনশীল। তাই ঘুমানোর আগে একটি ভালো আই ক্রিম ব্যবহার করলে ডার্ক সার্কেল, ফোলাভাব এবং সূক্ষ্ম রেখা কমে আসে। এতে চোখের চারপাশের ত্বক সতেজ ও টানটান থাকে। একইভাবে ঠোঁটের যত্ন নেওয়াও জরুরি। রাতে ঘুমানোর আগে লিপ বাম বা প্রাকৃতিক তেল লাগালে ঠোঁট নরম থাকে এবং ফাটা ঠোঁটের সমস্যা দূর হয়।
ত্বকের যত্নের পাশাপাশি শরীরের ভেতর থেকেও হাইড্রেশন জরুরি। ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানি পান করা অভ্যাসে পরিণত করুন। এটি শরীরের ভেতর থেকে ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং সকালে ত্বককে সতেজ দেখায়।
প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বকের যত্ন নিতে চাইলে কিছু ঘরোয়া উপাদানও রাতের যত্নে যুক্ত করা যেতে পারে। যেমন, অ্যালোভেরা জেল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করে তোলে। নারকেল তেল গভীরভাবে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে। সপ্তাহে কয়েকদিন দই ও মধুর মিশ্রণ ব্যবহার করলেও ত্বকের টেক্সচার উন্নত হয় এবং তা আরও কোমল হয়ে ওঠে।
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন ত্বকের যত্ন শুধু বাহ্যিক নয়, ঘুমের মানও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত ও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম ত্বকের পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, ফলে ত্বক হয়ে ওঠে আরও উজ্জ্বল, সতেজ ও তরুণ। কম ঘুমালে ত্বক ক্লান্ত, রুক্ষ ও ফ্যাকাশে দেখায়, তাই প্রতিদিন অন্তত সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত প্রয়োজন।
রাতের স্কিনকেয়ার রুটিনকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে তার ফল চোখে পড়বে কয়েক দিনের মধ্যেই। সকালে আয়নায় নিজের মুখ দেখলে বুঝতে পারবেন, ঘুমের সময় ত্বক ঠিক কতটা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একটি নিয়মিত night skincare routine for glowing skin শুধু বাহ্যিক উজ্জ্বলতাই আনে না, ত্বকের গভীর থেকে তারুণ্য ফিরিয়ে আনে। তাই প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে অল্প সময় ব্যয় করে নিজের ত্বকের যত্ন নিন, কারণ এই সময়েই লুকিয়ে আছে আপনার ত্বকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের গোপন রহস্য।

