Tax included and shipping calculated at checkout
দৈনন্দিন ব্যস্ততায় নিজের ত্বকের যত্ন নেওয়ার সময় পাওয়া অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে যায়। অফিস, পড়াশোনা বা ঘরের কাজের ভিড়ে ত্বক হারায় তার প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা, হয়ে ওঠে ক্লান্ত ও নিস্তেজ। কিন্তু সুখবর হলো সবসময় লম্বা স্কিনকেয়ার রুটিনের প্রয়োজন নেই। মাত্র ১৫ মিনিট সময় দিলেই ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব উজ্জ্বল, সতেজ ও প্রাণবন্ত ত্বক। প্রাকৃতিক কিছু উপাদান এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে আপনি খুব অল্প সময়েই নিজের ত্বকে ফিরিয়ে আনতে পারেন তাৎক্ষণিক গ্লো।
প্রথম ধাপ হলো ত্বক পরিষ্কার করা। সারাদিনের ধুলোবালি, তেল এবং দূষণের কারণে ত্বকের ছিদ্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। এতে ত্বক নিস্তেজ দেখায় এবং ব্রণ বা র্যাশের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই প্রথমেই মুখ ধুয়ে নিন হালকা গরম পানি দিয়ে। এটি ত্বকের পোরস খুলে দেয় এবং গভীরের ময়লা সহজে পরিষ্কার হয়। এরপর নিজের ত্বকের ধরন অনুযায়ী একটি মাইল্ড ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। পরিষ্কার ত্বকই পরবর্তী যত্নের জন্য প্রস্তুত মঞ্চ তৈরি করে।
ত্বক পরিষ্কার করার পরই শুরু হয় আসল ম্যাজিক ঘরোয়া instant glowing skin home remedy। সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর একটি ফেস প্যাক তৈরি করতে পারেন বেসন, মধু ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে। এক টেবিল চামচ বেসনে এক চা চামচ মধু ও দুই চা চামচ দুধ মিশিয়ে মুখে লাগান। এটি ত্বকের ময়লা টেনে বের করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। মধু ত্বককে হাইড্রেট করে আর দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বকের মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে। মাত্র ১০–১৫ মিনিট রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে আপনি সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারবেন ত্বক কতটা সতেজ লাগছে।
যদি ত্বক অনেক ক্লান্ত দেখায়, তবে দই ও কফির মিশ্রণও হতে পারে চমৎকার বিকল্প। কফির অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকে রক্ত চলাচল বাড়ায় এবং দই ত্বকের টেক্সচার মসৃণ করে। এই প্যাকটি মুখে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট, তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সঙ্গে সঙ্গে ত্বক হয়ে উঠবে টানটান ও উজ্জ্বল।
আরেকটি জনপ্রিয় প্রাকৃতিক সমাধান হলো অ্যালোভেরা জেল। যারা ঘামাচি, ত্বকের জ্বালা বা অতিরিক্ত রোদে পোড়া সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ। তাজা অ্যালোভেরা পাতার জেল মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকে তাৎক্ষণিক ঠান্ডা অনুভূতি এনে দেয় এবং নিস্তেজ ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে তোলে।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ানোর আরেকটি কার্যকর উপায় হলো লেবু ও মধুর মিশ্রণ। লেবুর ভিটামিন সি ত্বকের দাগ হালকা করে এবং মধু ত্বকে প্রাকৃতিক গ্লো এনে দেয়। তবে সংবেদনশীল ত্বকে এটি সরাসরি ব্যবহার না করে সামান্য পানি মিশিয়ে নিন। ১০–১২ মিনিট রাখার পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই পাবেন তাৎক্ষণিক উজ্জ্বল ত্বক।
এছাড়া, যদি আপনি বাইরে থেকে ফিরে ত্বকের ক্লান্তি দূর করতে চান, তবে শসা বা টমেটো রস মুখে লাগাতে পারেন। এগুলো ত্বকে শীতলতা আনে এবং ডার্কনেস বা ফ্যাকাশে ভাব কমায়। শসার জুসে তুলা ভিজিয়ে ১৫ মিনিট মুখে লাগিয়ে রাখুন, তারপর মুখ ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। ত্বক হয়ে উঠবে নরম, ঠান্ডা ও সতেজ।
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এই যত্নের পর ত্বককে ভালোভাবে ময়েশ্চারাইজ করা। অনেক সময় আমরা ভাবি, শুধু ফেস প্যাক ব্যবহার করলেই হবে, কিন্তু আসল গ্লো ধরে রাখতে ত্বকে আর্দ্রতা রাখা খুব জরুরি। হালকা ক্রিম বা প্রাকৃতিক তেল, যেমন নারকেল তেল বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বকের গভীরে পুষ্টি যোগায় এবং উজ্জ্বলতা দীর্ঘস্থায়ী রাখে।
যদি বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আগে ত্বককে প্রাণবন্ত করতে চান, তবে বরফের টুকরো মুখে কয়েক মিনিট ঘষে নিতে পারেন। এটি পোরস ছোট করে, ফোলা ভাব কমায় এবং ত্বককে করে টানটান। এরপর হালকা ফাউন্ডেশন বা মেকআপ দিলেই ত্বকে দেখা যাবে স্বাভাবিক এক ন্যাচারাল গ্লো।
এভাবে নিয়মিত ১৫ মিনিট সময় দিয়ে সপ্তাহে কয়েকবার এই যত্ন নিলে ত্বক শুধু তাৎক্ষণিক উজ্জ্বলই নয়, দীর্ঘমেয়াদে হয়ে উঠবে আরও মসৃণ, টানটান ও স্বাস্থ্যবান।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, উজ্জ্বল ও সতেজ ত্বক পেতে ব্যয়বহুল ট্রিটমেন্ট বা সময়সাপেক্ষ রুটিনের প্রয়োজন নেই। আপনার রান্নাঘরেই আছে সেই সব প্রাকৃতিক উপাদান যা মাত্র কয়েক মিনিটেই ত্বকের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে। নিয়মিত যত্ন আর সামান্য সময় এই দুইয়ের সমন্বয়েই পাওয়া সম্ভব আকর্ষণীয়, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক। তাই এখন থেকেই নিজের ত্বকের জন্য সময় বের করুন, কারণ মাত্র ১৫ মিনিটের ঘরোয়া যত্নেই ত্বক পেতে পারে নতুন উজ্জ্বলতা ও সতেজতার ছোঁয়া।

